Blog Post

CNTV CTG > অপরাধ > নিহতের ঘটনায় মামলা নিয়ে বাণিজ্য হচ্ছে ছাত্র-জনতার আন্দোলন : ডিএমপি কমিশনার

নিহতের ঘটনায় মামলা নিয়ে বাণিজ্য হচ্ছে ছাত্র-জনতার আন্দোলন : ডিএমপি কমিশনার

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় মামলা নিয়ে বাণিজ্য হচ্ছে। গতকাল রোববার বিকেলে এমন ঘটনায় জড়িত অভিযোগে মোহাম্মদপুর অঞ্চলের এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ওই সব মামলায় আসামি হলেই গ্রেপ্তার কিংবা বাসায় বাসায় গিয়ে হয়রানি করা যাবে না। তদন্তে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলেই কেবল আইনের আওতায় আনা যাবে।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বর্তমানে ডিএমপি এবং সেই সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ নতুনভাবে মানুষকে সেবা দেওয়ার কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন নতুন ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত আলী। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে অহরহ ছিনতাই ও ডাকাতি হচ্ছে। বিভিন্নভাবে আমাকে জানানো হয়েছে, ছিনতাই বেড়েছে। ছিনতাই প্রতিরোধে ডিবি ও থানা-পুলিশকে সক্রিয় করা হয়েছে। চাঁদাবাজি হচ্ছে, কিন্তু সমাজ থেকে প্রতিরোধ করা না গেলে চাঁদাবাজি বন্ধ করা কঠিন। আপনারা কেউ চাঁদা দেবেন না। আমরা পুলিশ জনগণের পাশে থাকব।’

শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, গত জুলাই–আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর বিশেষ করে ডিএমপির ভঙ্গুর অবস্থায় আগের ডিএমপি কমিশনার কাজ করেছেন। গত জুলাই-আগস্ট যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের সবার প্রতি সমবেদনা এবং যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছেন। ছাত্র-জনতার ওই আন্দোলনের সময় ডিএমপি নানা ধরনের কর্মকাণ্ডের সম্মুখীন হয়। তখন পেশাদারির বাইরে গিয়ে অনেক পুলিশ সদস্য কাজ করেন। সে কাজের জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

সাজ্জাত আলী বলেন, বর্তমানে ডিএমপি তথা বাংলাদেশ পুলিশ নতুনভাবে মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ডিএমপির ওই সময়ের যেসব পুলিশ কর্মকর্তা পেশাদারির বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন, তাঁদের বিভিন্ন জায়গায় বদলি করা হয়েছে। এ ছাড়া অনেকের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। পুলিশ নতুন যেভাবে কাজ শুরু করেছে, এর জন্য ঢাকাবাসীর একান্ত সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ঢাকা শহরে এখন দুই কোটি লোকের বসবাস। এখানে নানাবিধ সমস্যা আছে। সীমিতসংখ্যক পুলিশ সদস্য নিয়ে দুই কোটি লোকের নিরাপত্তা বিধান করছে ডিএমপি।

শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ৫ আগস্টের পর পরবর্তী পরিস্থিতিতে পুলিশ অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। তখন ঢাকা শহরে খুনখারাবি, ডাকাতি ও লুটপাট শুরু হয়ে যায়। বিভিন্ন মহল্লায় আবালবৃদ্ধবনিতা ও নারীরা পাহারা দিতেন। ৮০ বছরের বৃদ্ধকে পাহারা দিতে দেখা গেছে। ডিএমপি তখন একটি ট্রমার মধ্যে পড়ে যায়। আগের ডিএমপি কমিশনার, আইজিপি ও তাঁদের সহকর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রমে ওই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হন। তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা ট্রাফিক। এই শহরে বিপুলসংখ্যক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। অটোরিকশা যদি বন্ধ না হয়, তাহলে ঢাকা শহরের ঘর থেকে বের হলে আর হাঁটার জায়গা থাকবে না। মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।

ডিএমপির এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। ট্রাফিক আইন কেউ মানতে চায় না। হকাররা ফুটপাত দখল করে নিয়েছেন। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরু করেছি। ট্রাফিক আইনে দ্বিগুণ হারে মামলা করা হচ্ছে। ঢাকাবাসীর সহযোগিতা ছাড়া ট্রাফিক–ব্যবস্থা উন্নত হবে না। উত্তরা থেকে একজনকে মতিঝিল পৌঁছাতে তিন ঘণ্টা ও ফিরতে তিন ঘণ্টা করে মোট ছয় ঘণ্টা লাগে। এ দীর্ঘ সময় একজন ব্যক্তিকে রাস্তায় যানজটে আটকে থাকতে হয়। এতে দিনে ওই ব্যক্তির কাজ করে খাওয়ার মতো সময় হাতে থাকে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ‘গত ১৫ বছরে পুলিশ বাহিনীতে ৮০ থেকে ৯০ হাজার সদস্যকে বিভিন্নভাবে পরিচয় (রাজনৈতিক) নিশ্চিতের পর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগের আগে তাঁদের নানাভাবে যাচাই করা হয়েছে। নিয়োগপ্রার্থী কোন দলের, তাঁর বাবা কোন দলের, দাদা কোন দলের এবং আরও পূর্বপুরুষ কোন দলের, তার খবর নেওয়া হয়েছে। ২ লাখ পুলিশ সদস্যের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ হাজার এভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। এই ৮০ থেকে ৯০ হাজার পুলিশ সদস্যকে তো বলতে পারি না “গো হোম” (বাসায় ফিরে যাও)। তবে যাঁরা দুষ্টু, যাঁরা পেশাদারির বাইরে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়েছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস এবং ৩১ ডিসেম্বর খ্রিষ্টীয় বর্ষবরণ আগের রাতের নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশ কাজ করছে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *