চলচ্চিত্রবিষয়ক যতগুলো কমিটি হয়েছে, তার মধ্যে পরামর্শক কমিটিই আমার বিবেচনায় সবচেয়ে ভালো হয়েছে। বাকি কমিটিগুলোতে যোগ্য লোক যেমন আছে, কিছু বিস্ময়কর নামও আছে। এই সমালোচনাটা করে রাখা দরকার, যাতে সরকার বুঝতে পারে। না হলে আগের আমলের মতো ‘কর্তা যা করেছেন মাইরি’ সিচুয়েশন (পরিস্থিতি) বানিয়ে ফেলব আমরা।
আমার বিবেচনায় এখানে (পরামর্শক কমিটি) আরও অংশীজন থাকা উচিত ছিল। যেমন ফাহমিদুল হক, বিধান রিবেরু, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, মেজবাউর রহমান সুমন, নুহাশ হুমায়ূন। স্বচ্ছতার জন্য বলে নেওয়া ভালো, পরামর্শক এবং আরেকটা কমিটিতে থাকার জন্য আমাকে অনুরোধ করা হয়েছিল। আমি ব্যক্তিগত কারণে থাকতে চাইনি। এখন যাদের নাম উল্লেখ করলাম, তারা থাকতে অপারগতা জানিয়েছে কি না, আমি জানি না।
আরও পড়ুন
পরামর্শক কমিটি কতটা কার্যকর হবে
আমার বক্তব্য থাকবে, এই পরামর্শক কমিটি থেকে পরামর্শ যা যাবে, তা যেন অংশীজনরাই তৈরি করে দেন। সরকারি কর্মকর্তাদের কেবল এক্সিকিউশনের (সম্পাদন) দিকটা দেখা উচিত। নীতি প্রণয়নে তাঁরা (সরকারি কর্মকর্তা) হাত না দেওয়াই ভালো হবে। কারণ, তাঁরা তো আমাদের সমস্যা ও প্রয়োজনটা জানেন না।
প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে রেভিনিউ শেয়ার ও ই-টিকিট নিয়ে কথা বলেছি। ফলে ওটা রিপিট (পুনরাবৃত্তি) করছি না। এখানে আরেকটা কথা যোগ করতে চাই, শিল্পকলা একাডেমির জমি আছে মোটামুটি দেশজুড়েই। কমপক্ষে ৩০ জেলায় শিল্পকলার জায়গায় মাল্টিপ্লেক্স করে সেটা দরপত্রের ভিত্তিতে প্রাইভেট ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। যেহেতু আমাদের জাতিগত দুর্নাম ‘আমরা শুরু করি, অব্যাহত রাখি না’, সেহেতু এসব মাল্টিপ্লেক্সকে মনিটরিংয়ে রাখতে হবে এর মেইনটেন্যান্স ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, না হলে লিজ বাতিলের শর্ত থাকতে হবে। এখন ঝামেলা হলো শিল্পকলা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন। আর সিনেমা-টিভি ওটিটি তথ্য ও সম্প্রচারে। এই দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় করে হলেও এটা করা দরকার।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীছবি: সংগৃহীত
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর একটা হচ্ছে ফিল্ম ফান্ড ও সাপোর্ট সিস্টেম। আমাদের সামনে বুসান, সানড্যান্স, বার্লিন, রটারডাম, ফিল্মবাজার স্ক্রিন রাইটার্স ল্যাবের উদাহরণ আছে। আমি মনে করি, পরামর্শক কমিটির উচিত অনুদান প্রথাতে আমূল পরিবর্তন আনা। ৫০ ভাগ ছবি ফার্স্ট অ্যান্ড সেকেন্ড টাইম ফিল্মমেকারদের জন্য বরাদ্দ থাকা উচিত। এই ৫০ ভাগের মধ্যে কমপক্ষে অর্ধেক নারী ফিল্মমেকারদের জন্য থাকা উচিত। তো এই নতুন পরিচালকদের স্রেফ ফান্ড দিয়েই হাত গুটিয়ে ফেলা যাবে না। স্ক্রিন ল্যাবের মতো ইনকিউবিটরে লোকাল ও ইন্টারন্যাশনাল মেন্টর দিয়ে এদের সহায়তা করতে হবে।
পাশাপাশি আমাদের অনুদান পলিসি নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবা উচিত। আমরা কোন ধরনের ছবিকে অনুদান দেব? ইরানের মতো সোশ্যালি রিলেভ্যান্ট ও ইমপ্যাক্টফুল স্টোরিটোলিং? নাকি কলকাতা আর্ট হাউজের দুর্বল ফটোকপি? নাকি বেলা তারের মতো ছবি? আমার বিবেচনা হচ্ছে, আমাদের এখানকার মানুষ, তাদের সম্পর্ক, আবেগ, পাগলামো—এসব মিলিয়ে আমাদের আশপাশে নিজস্ব গল্প ও চরিত্রেরা হেঁটে বেড়াচ্ছে। এসব নিয়ে সোশ্যালি রিলেভ্যান্ট ছবির সংখ্যা বাড়লেই আমরা সত্যিকারের বাংলাদেশি নিউ ওয়েভ হতে পারব।