ভালোবাসার কোনো ধরাবাধা নিয়ম নেই। নেই কোনো সীমানা। এই তত্ত্বে বিশ্বাসী অনেকেই নানা ধরনের বস্তুকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আইফেল টাওয়ার থেকে শুরু করে ট্রেন কিংবা দেয়াল—কী নেই সেই তালিকায়। আর দশটা মানুষ থেকে একটু ভিন্নভাবেই চিন্তা করেন তাঁরা, নামের আগে–পরে ‘পাগল’ শব্দটিও শুনেছেন। কিন্তু পাত্তা না দিয়ে বাস্তবে বস্তুকে বিয়ে করেই আনন্দে আছেন।
এরিকা আইফেল
এরিকা আইফেলছবি: পিপল হু লাভ অবজেক্টস
পদবিতে আইফেল আছে, বুঝতেই পারছেন আইফেল টাওয়ারকে বিয়ে করেছেন এই কনে। বিয়ের আগে নাম ছিল এরিকা ল্যাব্রি। ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে আইফেল টাওয়ারের সঙ্গে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ তিনি। জড় বস্তুর প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন তিনি। বস্তুর মধ্যে খুঁজে পান ভালোবাসা। শৈশব থেকেই নিজের এই প্রবণতা টের পেতেন এরিকা। এ কারণে তাঁকে অনেক উপহাসেরও শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু বয়ঃসন্ধিকালের আগপর্যন্ত বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারেননি। জীবনে প্রথমবার বুঝতে পারেন, যখন বাড়ির কাছের সেতুটি তাঁর কাছে প্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে। তবে অনেক প্রেমকাহিনির মতো আরেক বস্তুর আগমনের মধ্য দিয়ে এই প্রেমকাহিনির সমাপ্তি ঘটেছে। বার্লিন প্রাচীরের সঙ্গে তাঁর ২০ বছরের সম্পর্ক। পরে ‘এরিকাস ওয়াল’ নামের একটি মিউজিক্যাল থিয়েটার বানাতেও এটি অণুপ্রাণিত করেছে। ২০০৭ সালে আইফেল টাওয়ারকে বিয়ে করেন তিনি। এরপর পদবি বদলে রাখেন আইফেল। আইফেল টাওয়ারকে ঘিরে লাখ লাখ পর্যটক নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ করে, কিন্তু আইফেল টাওয়ার দাঁড়িয়ে থাকে একলা। এই চিন্তাও তাঁকে বিয়েতে অনুপ্রাণিত করে।
তীরন্দাজিতে দুবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন এরিকাছবি: উইকিমিডিয়া কমনস
তীরন্দাজিতে দুবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন এরিকা। তামিশিগিরিতেও (জাপানি তলোয়ার কৌশল) তিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। এফ-১৫ যুদ্ধবিমানের প্রতি আকর্ষণের কারণে মার্কিন বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। এরিকা আইফেল বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক লংবোর্ডার এবং ক্রেন অপারেটর হিসেবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
মিসেস বার্লিন ওয়াল
ছবি: ফেসবুক থেকে
১৯৬১ সালে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানিকে ভাগ করে গড়ে তোলা হয় বার্লিন প্রাচীর। যে দেয়ালকে অনেকে সহ্যই করতে পারছিলেন না, সেটিকে ভালোবেসে ফেলেন এইয়া রিটা একলফ, যাকে বলে প্রথম দর্শনেই প্রেম। ১৯৫৪ সালে সুইডেনের ছোট্ট শহর লিডেনে জন্মগ্রহণ করেন রিটা। বার্লিন প্রাচীর তৈরির সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৭ বছর। টেলিভিশনে প্রথম দর্শনেই এটিকে ভালোবেসে ফেলেন। সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন থেকে ‘তাঁর’ (দেয়াল) ছবি সংগ্রহ করতে শুরু করেন। অন্য কিশোরীদের মতোই ‘প্রিয়’র ছবি দিয়ে সাজিয়েছেন ঘরের দেয়াল।
১৯৭৯ সালে ষষ্ঠ ভ্রমণে আনুষ্ঠানিকভাবে বার্লিন দেয়ালকে বিয়ে করেন এইয়া। বিয়ের সময় তাঁর বয়স ছিল ১৮ বছর। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল হাতে গোনা কয়েকজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। ২৮ বছর বয়সে নিজেকে বিধবা ঘোষণা করেন, যখন দেয়ালটি ভেঙে ফেলা হয়। ২০১৫ সালে বাড়িতে আগুন লেগে মারা যান রিটা। তার আগপর্যন্ত প্রতিবছর ১৩ আগস্ট মোমবাতিতে ফুঁ দিয়ে, কেক কেটে স্বামীর জন্মদিন পালন করেছেন।স্মা
স্মার্টফোনকে বিয়ে
আংটি পরিয়ে দেওয়ার সময় ফোনটি হাতে তুলে নেন অ্যারনছবি: ইউটিউব ভিডিও থেকে
‘ভেগাসে যা ঘটবে, তা ভেগাসেই থাকা ভালো’—যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে বিয়ে করা প্রসঙ্গে কথাটি বেশ চালু। শুনলে অবাক হতে হয়, কিন্তু লস অ্যাঞ্জেলেসের অ্যারন চেরভেনাক ৩৪ বছর বয়সে লিটল ভেগাস চ্যাপেলে তাঁর আইফোনকে বিয়ে করেন ২০১৬ সালে। বিয়ের ভিডিওতে বিষয়টি তিনি ব্যাখ্যাও করেন, ‘সত্যি কথা বলতে, আমরা আমাদের ফোনের সঙ্গে আবেগীয়ভাবে যুক্ত। নিজেদের শান্ত করার জন্য, সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য, ঘুম পাড়ানোর জন্য, আমাদের মনকে বোঝানোর জন্য মুঠোফোনকে ব্যবহার করি। আমার কাছে এটা একটা সম্পর্কের মতো। মানুষ তাদের ফোনের সঙ্গে সব রকমভাবেই যুক্ত। সব সময় এটি আমাদের সঙ্গে থাকে। আমরা ফোন নিয়ে ঘুমাতে যাই, ঘুম ভাঙার পর চোখ খুলে প্রথমে মুঠোফোনের দিকেই তাকাই।’ আংটি পরিয়ে দেওয়ার সময় ফোনটি হাতে তুলে নেন অ্যারন। এরপর ফোন কেসের সঙ্গে যুক্ত একটি রিংয়ের ভেতরে আঙুল ঢুকিয়ে দেন। অনেকে মজা করে বলেন, ‘যখন নতুন ফোন কিনবেন, পুরোনোটিকে কী করবেন?’
রন চেরভেনাকছবি: ইউটিউব ভিডিও থেকে
এ ছাড়া ব্রিটিশ নাগরিক পাসকেল সেলিক বিয়ে করেছেন তাঁর প্রিয় ডুভ্যেকে (লেপ), যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অ্যামি উলফ বিয়ে করেছেন রোলার কোস্টারকে। ব্রাজিলের নাগরিক মিরিভোনে রোচা মোরাইস বিয়ে করেছেন পুতুলকে। পেরুর অভিনয়শিল্পী রিচার্ড টোরস বিয়ে করেছেন গাছকে। আর আস্ত একটা ট্রেন স্টেশনকে বিয়ে করেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যারল স্যান্টা।